কেন কবুতর পালন লাভজনক
কেন কবুতর পালন লাভজনক
ভূমিকা ঃ বাংলাদেশ
নয় সারা বিশ্বেই বিভিন্ন গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর
পালন জনপ্রিয়।
বেশিরভাগ
ক্ষেত্রে কবুতর পালন করা
হয় - এর বাহ্যিক সৌন্দর্যের
দিকগুলোর কারণে। অতীতকালে
যখন
ডাকের ব্যবস্থা ছিল না, তখন চিঠিপত্র আদান প্রদানের জন্য কবুতর পালন করা হতো।
প্রাচীনকালে
রাজা বাদশাহ তাঁদের বিভিন্ন
ধরনের বার্তা প্রেরণের জন্য
বেছে নিতেন তাদের পছন্দের কবুতরকে। শান্তির
দূত হিসেবে। এই
কারণে, বিভিন্ন গঠনমূলক কাজে ধর্মাধর্ম নির্বিশেষে
কবুতরকে খাঁচামুক্ত করে উদ্বোধন করা
হয়।
কবুতর
পালন করার জন্য অতিরিক্ত
বা বাহুল্য কোন খরচ হয়
না। কবুতরকে
সহজেই পোষ মানানো যায়। বাড়ির
যেকোন কোণ বা আঙিনা
অথবা বাড়ির ছাদ কিংবা
কার্নিশের মত ছোট বা
অল্প জায়গাতে ও কবুতর পালন
করা যায়। এমনকি
ছাদের সাথে ঝুড়ি ঝুলিয়ে
ও কবুতর পালন করা
যায়। এই
কারণে, শহরে কী গ্রামে
অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করা
যায়।
কবুতরের
মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক বিশেষজ্ঞরা
বলেন, কবুতরের মাংসে সাধারণ অন্যান্য
পাখির মাংসের চাইতে প্রোটিনের
পরিমান বেশি। ফলে
আমিষের পাশাপাশি প্রোটিনের বাড়তি চাহিদা পূবণের
জন্য ও কবুতরের মাংস
খাওয়া হয়ে থাকে।
বানিজ্যিকভাবে কবুতর পালন করে
অনেকেই অল্প সময়ে এটাকে
লাভ জনক ব্যবসা হিসেবে
দাঁড়া করাতে পেরেছেন। কবুতর
সাধারণভাবে জোড়ায় বেঁধে বাস
করে। প্রতি জোড়ায়
একটি পুরুষ এবং একটি
স্ত্রী কবুতর থাকে।
এরা ১২ থেকে ১৫
বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন
এরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চা
প্রজনন করে থাকে।
ডিম পাড়ার পর স্ত্রী
ও পুরুষ উভয় কবুতরই
পর্যায়ক্রমে উক্ত ডিমে তা
দিয়ে থাকে। কবুতরের
কোন জোড়া হঠাৎ ভেঙে
গেলে সেই জোড়া তৈরি
করতে কিছুটা বেগ পেতে
হয়। নতুন
জোড়া তৈরি করার জন্য
স্ত্রী ও পুরুষ কবুতরকে
একঘরে কিছুদিন রাখতে হয়।
কবুতর
পালনের বিভিন্ন সুবিধা সমুহ ঃ
কবুতর পালন করলে অসুবিধার
চেয়ে সুবিধার পরিমাণ বেশি। সুবিধাসমূহ
হলো- (১) সাধারনত একটি
ভাল জতের কবুতর বছরে
১২ জোড়া ডিম প্রদানে
সক্ষম হয়ে থাকে।
এই ডিম গুলোর প্রায়
প্রতিটি থেকেই বাচ্চা পাওয়া
যায়। এই
বাচ্চা পরবর্তী ৪ সপ্তাহের মধ্যেই
খাওয়া বা বিক্রির উপযোগী
হয়। (২)
গৃহপালিত অন্যান্য পাখির মধ্যে কবুতরকে
পোষ মানানো বা লালন
করা যায়। (৩)
খুবই অল্প জায়গায় কবুতর
লালন পালন করা যায়। এমনকি
ঝোলানো ঝুড়িতেও কবুতর পালন করা
সম্ভব। লালন
পালনে কম জায়গা লাগে
বলে কবুতর পোষায় খরচের
পরিমাণ একেবারেই কম। (৪)
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবুতর নিজের খাবার
নিজেই খুঁজে নিয়ে থাকে। এই
কারণে কবুতরের খাবারের জন্য বাড়তি যতœ
বা খরচ খুব একটা
হয় না বললেই চলে। (৫)
কবুতরের থাকার জায়গার জন্য
বাড়তি যতেœর প্রয়োজন
হয় না। বাড়ির
আঙিনা, বা ছাদের ওপর
কাঠের ঘর তৈরি করে অনায়াসেই
কবুতর পালন করা যায়। প্রমাণ
সাইজের ঝুড়িতে করে ও
কবুতর পালন করা যায়। (৬)
একটি পূর্ণাঙ্গ বয়সের কবুতর ডিম
দেবার উপযোগী হতে ৫
থেকে ৬ মাস সময়
লাগে। এই
অল্প সময় অতিক্রান্ত হবার
পর থেকেই কবুতর বছরে
প্রায় ১২ জোড়া ডিম
প্রদানে সক্ষম। ২৬
থেকে ২৮ দিন বয়সেই
কবুতরের বাচ্চা খাবার উপযোগী
হয়ে থাকে বা এই
বাচ্চাকে বাজারজাত করা যায়।
সাধারণত কবুতরের বাচ্চা রুগীর পথ্য
হিসেবেও অনেকে বেছে নেন।
(৭) কবুতরের ডিম েেক মাত্র ১৮
দিনেই বাচ্চা সাধারণ নিয়মে
ফুটে থাকে। এই
বাচ্চা আবার পরবর্তী ৫
থেকে ৬ মাস পরে
নিজেরাই ডিম প্রদান শুরু
করে। ফলে
কবুতর বংশ পরম্পরায় প্রাকৃতিক
নিয়মে নিজেরাই বাড়াতে থাকে নিজেদের
সংখ্যা। (৮)
কবুতরের মাংস প্রচুর চাহিদা
রয়েছে। কারণ,
কবুতরের মাংস খুবই সুস্বাদু
ও বলকারক। তাছাড়া,
বাজারের অন্যান্য মাংসের যোগান থেকে
কবুতর কিছুটা সস্তাতে ও
পাওয়া যায়।
একটি খুব ভালো প্রজাতির
কবুতর লালন করলে পরবর্তী
১ বছরের মধ্যে সেই
জোড়া থেকে কয়েক জোড়া
কবুতর পাওয়া খুব বেশি
আর্শ্চযজনক বিষয় নয়।
এই কবুতরকে একটি লাভজনক ব্যবসা
হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ,
কবুতর লালন-পালনের খরচ
খুব একটা নেই। এমনকি
কবুতরের রোগ ব্যাধি কম
হয়। কবুতরের
থাকার জায়গা নির্বাচনে ও
অতিরিক্ত যতেœর প্রয়োজন
হয় না। এই
কারণে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কবুতর পালন অবশ্যই
লাভজনক।
ধারাবাহিক
ভাবে কবুতর তার বংশবৃদ্ধি
করে বলে অনেকেই আজকাল
কবুতর পালনের দিকে ঝুঁকে
পড়েছেন। মুরগির
মাংসের বিকল্প হিসেবে কিংবা
অতিথি পাখির বিকল্প হিসেবে
অনেকেই কবুতরের মাংস বেছে নিয়ে
থাকেন।
Comments
Post a Comment